আলোকিত বাংলা প্রতিবেদকঃ কথাসাহিত্যিক মাহফুজা হাসান মাজহার। তার প্রথম উপন্যাস ‘অভিমানী নন্দিনী বধূয়া’ ২০২০ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অতঃপর ভালোবাসা’ ২০২১ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়।
ছাত্রজীবনে প্রথমে ছবি আঁকা, পরে নাটক, আবৃত্তি ও সাহিত্যচর্চা করতেন। ছবি আঁকা, নাটক ও আবৃত্তিতে পুরস্কার লাভ করেন অনেকবার।
মাহফুজা হাসান মাজহারের প্রকাশিত উপন্যাস ‘অতঃপর ভালোবাসা’ প্রকাশিত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এবং ‘অভিমানী নন্দিনী বধূয়া’ প্রকাশিত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা ২০২০।
কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন ‘শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক স্মৃতি সম্মাননা-২০২১’ এবং ‘মহাকবি শেখ সাদী (রহ.) স্মৃতি সম্মাননা-২০২১’।
মাহফুজা হাসান মাজহার জন্ম ৪ আগস্ট ১৯৮৬, রাজশাহীতে। পিতা হাসানুর রহমান ভেড়ামারা গভ. কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। মাতা রাজিয়া খানম, বাংলাদেশ ব্যাংকের জয়েন ডিরেক্টর ছিলেন।
মাহফুজা হাসান মাজহারের শৈশব কেটেছে রাজশাহীতে। পিতা-মাতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা। লেখাপড়া করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি লেখালেখি চর্চা করেন। সৃষ্টিসুখের নির্মল আনন্দে লেখালেখি চর্চা অব্যাহত রাখতে চান তিনি।
মাহফুজা হাসান মাজহারের কন্যা তাসনিম বিনতে হাসান এবং পুত্র ইয়ুয়ান মুহাম্মদ। সাহিত্যাঙ্গনের অগ্রযাত্রার মূলে প্রেরণা যুগিয়েছেন তার স্বামী মেজর মো. মাজহারুল হাসান।
সম্প্রতি নিউজপোর্টাল আলোকিত বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। আলোকিত বাংলার পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অনন্ত রহমান।
আলোকিত বাংলা : বড় হয়ে কি হতে চেয়েছিলেন?
মাহফুজা হাসান মাজহার : সত্যি বলতে কী―বড় হয়ে আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম!
আলোকিত বাংলা : লেখালেখি কেনো করেন?
মাহফুজা হাসান মাজহার : কেন লিখি এ বিষয়ে এক কথায় কিছু বলা সম্ভব নয়। তারপরও যারা লেখালেখিতে আসেন তাদের সবারই নিজস্ব একটা গল্প থাকে। আমি আমার নিজের গল্পটা ভাবার চেষ্টা করি। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করি যে অক্ষরের সুড়ঙ্গপথে এই চেনা পৃথিবী ছাড়িয়ে যে নতুন এক পৃথিবীতে চলে যাওয়া যায় তার খোঁজ পেয়েছিলাম শৈশবেই। পরিবারের গন্ডির ভেতরেই ছিলো সাহিত্যের হাওয়া। মা বাবা গভীর সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। আমাদের ঘরভরা গল্প, উপন্যাস, কবিতার বইয়ে ঠাঁসা ছিল। শৈশব বয়সে সেইসব বইয়ের পাতায় চোখ রেখে টের পেয়েছিলাম, চোখের সামনে যে জীবন প্রবাহটা দেখি তার বাইরে অদৃশ্য একটা অন্তর্জাগতিক জীবনস্রোত আছে যেটা বন্দি হয়ে আছে এইসব অক্ষরে। দেখতাম অক্ষরের ভেতর দিয়ে সেই জীবনকে দেখতে গেলে রহস্যময় লাগছে সবকিছু। কেমন মায়াবী লাগছে। সেই মায়া, সেই রহস্যের নেশা পেয়ে বসে আমাকেও। আমার বাবাও লিখতেন। নিজের ব্যাক্তিগত লেখার খাতাতেই সেসব লেখার পরিনতি। বই আকারে মলাটবদ্ধ হওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই আমরা পরিবারের মানুষরাই ছিলাম সেসব লেখার পাঠক-পাঠিকা। কে জানে আমার বাবা-মার অপুর্ণ লেখক সত্বাই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে কিনা। লক্ষ্য করি, লেখার পাকচক্রে পড়বার আগে পড়েছিলাম পড়ার পাকচক্রে। নানারকম বইপত্র পড়েছি। কৈশোরে যে পড়াশোনার ঘোর লেগেছিলো তা অব্যহত থেকেছে বরাবেই। পরবর্তীতে পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে কিছু বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক, অগ্রজ সুহৃদয় এদের সুত্র ধরে লেখার পরিধিটা বেড়েছে।
আলোকিত বাংলা : প্রথম বই প্রকাশের অনূভূতি কি?
মাহফুজা হাসান মাজহার : প্রথম বই প্রকাশের পর কথাসাহিত্যিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করায় নিজেকে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে।
আলোকিত বাংলা : লেখালেখিতে কার কাছ থেকে বেশি প্রেরণা পান?
মাহফুজা হাসান মাজহার : লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই আগ্রহ ছিল। তখন পরিবার থেকেই আমি বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বর্তমানে আমার স্বামী মেজর মাজহার যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। আমার সন্তানরাও আমার অন্যতম প্রেরণা।
আলোকিত বাংলা : পত্রপত্রিকায় আপনার লেখা দেখা যায় না। কেনো?
মাহফুজা হাসান মাজহার : প্রথমদিকে আমার লেখার বিষয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায় প্রকাশনার প্রতি মনোনিবেশ করি। এরই ধারায় আমার উপন্যাস প্রকাশনা ‘আভিমানী নন্দিনী বধূয়া’, ‘অতঃপর ভালোবাসা’ প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় কখনো লেখা পাঠানো হয়নি। তবে শিঘ্রই পত্রিকায় আমার লেখা দেখতে পাবেন।
আলোকিত বাংলা : নিজের লেখা সম্পর্কে আপনি কি ধারণা পোষন করেন?
মাহফুজা হাসান মাজহার : নিজের লেখা সম্পর্কে সবাই উচ্চধারণাই পোষণ করে। আমি সেটা করব না। তবে এটা বলতে পারি যে, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে লিখতে চেষ্টা করি।
আলোকিত বাংলা : সম্প্রতি দুটা পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি কি?
মাহফুজা হাসান মাজহার : যে কোনো পুরস্কার প্রাপ্তিই আনন্দের। আমিও ভীষণভাবে আনন্দিত। কারণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছি।
আলোকিত বাংলা : আপনি কোন কোন লেখকের লেখা পড়তে ভালোবাসেন?
মাহফুজা হাসান মাজহার : বাংলা সাহিত্যর শীষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ইংরেজি সাহিত্যের ফিলিপ রথ, নিহার রঞ্জন দত্তসহ আরো অনেকেই আছেন।
আলোকিত বাংলা : বর্তমানে কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
মাহফুজা হাসান মাজহার : বর্তমানে লেখালেখি নিয়েই আছি পরবর্তি বই প্রকাশনার জন্য।
আলোকিত বাংলা : একজন কবি বা সাহিত্যিকের কি রকম সামাজিক দায়িত্ব থাক উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
মাহফুজা হাসান মাজহার : সমাজ পরিবর্তনে লেখক বুদ্ধিজীগণের ভূমিকাই অগ্রগামী। সমাজের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটকে পাঠকের কাছে নিপুণ দক্ষতায় উপস্থাপন করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
অনন্ত রহমান : ধন্যবাদ আপনাকে
মাহফুজা হাসান মাজহার : আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আলোকিত বাংলাকে।