সোলায়মান হাজারী ডালিম, উদীয়মান তরুণ সাংবাদিক। এরই মধ্যে তিনি পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। সম্প্রতি পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুন করেছে স্ত্রী। বাবার মৃত্যুর পর মা জেলে। দুই সন্তানের এখন কি হবে? এমন চিন্তা থেকে ফেসবুকে লিখেছেন। বিষয়টি আমাদের সবাইকেও ভাবিয়ে তুলেছে। সোলায়মান হাজারী ডালিম এর রাত জেগে চিন্তিত মনে লেখাটা হুবহু তুলে ধরছে আলোকিত বাংলা।
“০১. ফুটফুটে দুটো বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলে গা হিম হয়ে আসে। পরকীয়ার জেরে মায়ের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হয় বাবা। মাও খুনের দায় নিয়ে জেলে। কিন্তু ওদের কি হবে? এমন প্রশ্ন- শুধু আমাকে নয়, আরো অনেককেই নাড়া দিচ্ছে বারংবার।
০২. গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ফেনী শহরের নাজির রোড এলাকায় মো. সোহেল (৩৫) নামে দুবাই প্রবাসী এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার স্ত্রী শিউলী। মঙ্গলবার (২৪) আগষ্ট আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ধ্রুব জ্যোতি পাল তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মঙ্গলবার দুপুরে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত প্রায় ৭ ঘন্টাব্যাপী এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
০৩. স্বীকারোক্তিতে শিউলী যা বলেছে তাতে তাকে কিভাবে তাকে দোষারোপ করা যায় ঠিক ভেবে উঠতে পারছিনা। আইন হাতে তুলে নেয়াই হয়ত তার বড় অপরাধ।
০৪. আদালতে সে বলেছে-২০১৪ সালে বিয়ে হয়। ১৬তে জানতে পারে সোহেলের সাথে দুবাইতে এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। সে দেশে আসলেও সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতো। আমার কাছে সে স্বীকার করতো না।এ নিয়ে প্রায় ঝগড়া হতো। মাঝে মাঝে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। সংসার খরচের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিত। গত বৃহস্পতিবার ঘটনার রাতে ওই মেয়েকে নিয়ে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সোহেল মৌখিকভাবে আমাকে তালাক দিয়ে আমার ও তার পরিবারের অনেককে ফোন করে। ওদের ফোনে বলে আমাকে সকালে দেওনা পাওনাসহ নিয়ে যেতে।এক সময় সোহেল আমাকে সংসারের চাবি দিয়ে দিতে বললো। আমি তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। রাগে ক্ষোভে তাৎক্ষণিক হত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম। সোহেল তখনও মোবাইল টিপাটিপি করছিল। বটি দিয়ে ঘাড়ে কোপ দিলে সে বসা থেকে মাটিতে পড়ে যায়।
০৫. আদালতে মাকে দেখতে আসে তার দুই অবুঝ শিশু। তারা জানে শিউলী তাদের মা। এবং এটাই তাদের কাছে মূখ্য। এ জন্যই তারা মায়ের জন্য ব্যাকুল। তাদের কান্নায় পুরো আদালত পাড়ায় যেন হাহাকার শুরু হয়ে যায়। মাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিচারকের কক্ষে ওরা আদালতের বারান্দায় বেঞ্চে বসে থাকে মাকে এক নজর দেখার জন্য।
০৬. ওরা ওদের মাকে ফিরে পেতে চায়। বাবার চেয়েও ওদের মাকে বেশী দরকার। দেশের আদালত কি তাদের এ প্রয়োজনটা বুঝবে? মায়ের শাস্তি লঘু করবে? আদালত লালন পালনের জন্য দাদীর জিম্মায় দিয়েছেন অবুঝ এ দুই শিশুকে। দাদী বলেন আর যাই বলেন সন্তান-মা ছাড়া আর কারোর কাছেই ভাল থাকেনা, বাবার কাছেও না।
০৭. হত্যাকান্ডটির পরে আমি আমার ফেসবুক ওয়ালে এ বিষয়ে লিখেছিলাম। সেই লেখা দেখে দুবাই থেকে এক প্রবাসী আমাকে মেসেঞ্জারে নক দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন দুবাইতে সোহেলের সাথে বাংলাদেশী প্রবাসী আরেক মহিলার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় সময় সোহেলের সাথে সে মহিলাকে দেখা যেতো। সর্বশেষ মঙ্গলবার দিনগত রাতে (২৫আগষ্ট) আমি নিজেও ফেসবুকে সোহেলের সাথে ওই মহিলার বেশ কয়েকটা ছবি দেখেছি।
০৮. সোহেল বেঁচে নেই-বেঁচে থাকলে হয়তো সন্তানদের ভরণ পোষণ, অন্য মহিলার সাথে অবৈধভাবে মেলা মেশা এবং স্ত্রী নির্যাতনের বিচার করা যেতো। এখনতো আর সম্ভব না। এখন সবার আঙ্গুল শিউলীর দিকে বিচার এখনই তারই হবে।
০৯. সোহেল-শিউলীর প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে এবার ভিন্ন দিকে একটু চোখ রাখি। যে মহিলাটি সোহেলের স্ত্রী-সন্তান আছে জেনেও পরকীয়া করলো। সোহেলের সংসারে অশান্তি ডেকে আনল। স্ত্রী তালাক এবং শেষ পর্যন্ত সোহেলকে খুনও হতে হলো। সে মহিলার কি বিচার হওয়া উচিৎ না? প্রশ্নটা রেখে গেলাম।
১০. তবুও বলব-ঘটনার পেছনেও ঘটনা থাকতে পারে। মূল ঘটনা বেরিয়ে আসুক আর না আসুক দুটো অবুঝ শিশু তাদের মায়ের বুকে ফিরুক- তাদের মা তাদের কাছে অপরাধী নয়। যদি অপরাধী হতো তাহলে সন্তানদের সাথে নিয়ে পালাতো না, তাদের রেখেই চম্পট দিতো। সন্তানদের ভালবাসে বলেই তাদের রেখে যেতে পারেনি।
শেষ রাতের ভাবনা
২৫ আগষ্ট ২০২১”