চৌধুরী এ এম মোর্শেদ শিবলীঃ ‘প্রিন্সেস ডায়ানা’ সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ের রানী ছিলেন। ২৪ বছর আগে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানা’র মৃত্যু হয়।
১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ১৯ বছরের এই তরুণী বৃটিশ রাজকুমার প্রিন্স চার্লসকে বিয়ে করে যেমন সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ছিলেন তার চেয়েও বেশী মানুষ বিহ্বল হয়েছিল চমকে উঠেছিল তার মৃত্যুর খবরে। তার বিয়ের দৃশ্যের সম্প্রচার উপভোগ করে ছিল প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ। আর ১৬ বছর পরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্প্রচার দেখে ছিলেন এরচেয়েও বেশী।
ডায়ানা ব্রিটিশ রাজ পরিবারের বধূদের মধ্যে ইতিহাসে যেমন চিরস্মরণীয় তেমনি, কেবল মাত্র সে দেশেই নন বিশ্ববাসীর কাছে ছিলেন মানুষের হৃদয়ের রাজকুমারী হয়ে।
কেবলমাত্র সৌন্দর্য আর ফ্যাশনে ডায়ানা অদ্বিতীয় ছিলেন না সাধারণ মানুষের নয়নের মনি তাদের হ্রদয়ের রানী ছিলেন তিনি। তাইতো দুই যুগ পরেও পৃথিবী জুড়ে মানুষ প্রিন্সেস ডায়ানাকে ঠিক একই আবেগ-ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে তাকে।
রাজ পরিবারের পোশাকি নিয়মের বেড়া জাল ছিন্ন করে সাধারণ মানুষের মাঝে বেরিয়ে এসে ছিলেন প্রিন্সেস ডায়ানা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্ল্যামারাস ডায়ানা ছিলেন আইকন। তাইতো আমরা প্রায়ই ডায়ানার জীবনের একটা দিক আলোচনা করি তার সৌন্দর্য আর ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠা। কিন্তু এসব স্বত্বেও তিনি ছুটে গেছেন মানুষের কাছে। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র, শিক্ষা চিকিৎসা ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সাহায্য করেছেন। বধূ হিসেবে নিজের চারপাশে ঐশ্বর্য আর ক্ষমতার বলয় গড়ে তোলেননি। প্রায় একশটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মানুষের কল্যাণে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজ করেছেন। মানবসেবায় নিজেকে পুরোপুরি ঢেলে দিয়ে ছিলেন ডায়ানা।।
১৯৮০ দশকে ছোঁয়াচে রোগ ভেবে এইডস সম্পর্কে আতংক ছিল আকাশ ছোঁয়া। ঐ সময় ডায়ানা এইডস আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৯৭ সালের দিকে আফ্রিকায় ছুটে গিয়েছিলেন এইডসের ওষুধ আবিষ্কার, এইডস আক্রান্তদের সেবা দান ইত্যাদি কাজের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেন তিনি। নেলসন মেন্ডেলার সঙ্গে দেখা করেন, স্থল মাইন অপসারণের সংস্থার সংগে যুক্ত ছিলেন, সেন্টার পয়েন্টেরসঙ্গে কাজ করেছেন গৃহহীন দের জন্য।
ডায়ানার জীবনের আরেকটা দিক ছিল একেবারেই সাধারণ। বলতে গেলে দুঃখে ভরা। প্রিন্সেস হয়েও তার বিবাহিত জীবন ছিল প্রেম বঞ্চিত। ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেওয়ার পর ডায়ানার ব্যক্তিগত জীবন অতিষ্ঠ করেতুলেছিল মিডিয়া। পাপারাডজিদের চোখ ফাঁকি দিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার চেষ্টা করলেও তাদের তাড়া খেয়েই অনেকটা যেন১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় ডায়ানা চিরনিদ্রায় চলে গেলেন। তবে তার মানবিক গুনের জন্য আজও তিনি সবার হৃদয়ের রাণী হয়ে আছেন।
প্রিন্স চার্লসের সাথে ১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে বাগদানের পর থেকে ১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ডায়ানাকে বলা হত পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান মহিলা। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান, এবং ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে তার আন্দোলন তাকে বিখ্যাত করেছে। তার জীবদ্দশায় ডায়ানাকে বলা হতবিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী। অবশ্য সমালোচকদের মতে এই খ্যাতি এবং খ্যাতির জন্য প্রচেষ্টাই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ডায়ানা ও দোদি আল ফায়েদ এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ডায়ানার ২ ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম আর প্রিন্স হ্যারি। প্রিন্স উইলিয়াম আর হ্যারি প্রিন্সেস ডায়ানা মেমোরিয়াল ক্লাব বাংলাদেশকে এক চিঠির জবাবে জানিয়েছিলেন তাঁর মায়ের অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিতে চান তারা। আজ প্রিন্সেস ডায়ানার ২৪ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে ডায়ানা মেমোরিয়াল হেলথ্ এন্ড এডুকেশন ফাউন্ডেশন ও প্রিন্সেস ডায়ানা মেমোরিয়াল ক্লাব বাংলাদেশ ডায়ানার কর্মময় দিক নিয়ে ঘরোয়া ভাবে আলোচনা করবে। করোনা মহামারীতে বড় কোন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচেছ না।