মো: শামীম মিয়াঃ গ্রাম আমদির পাড়া। চারদিক সবুজে ঘেরা, আমাদের পাড়া। মাঠে, মাঠে, রাখালের বাঁশি বাজানো সুর, চলে যায় গ্রাম পেড়িয়ে বহুদুর। গাছে, গাছে, হরেক রকম ফুল, ফল,পাখির ডাক। রাতে জোনাকী পোকার মিটমিট আলো,আহা খুব সুন্দর লাগে দেখতে ভালো। এই গ্রামকে কেন্দ্র করে, আছে একটা বটগাছ। বটগাছটার বয়স প্রায়, একশত বছর হবে। এই বটগাছটার চারদিক দিয়ে গড়ে উঠেছে জনপদ। বটগাছের দক্ষিনে যমুনা নদী, এবং পশ্চিমে বাঙ্গালী নদী। বটগাছের আশে পাশে বেশ কয়টা দোকান আছে। দক্ষিনে জুমারবাড়ী বাজার, উত্তরে সাঘাটা থানা, কয়েক কিলো দুরে গাইবান্ধা জেলা। বটগাছের নিচে বসে অনেক শ্রমজীবি লোকজন বিশ্রাম নেয়। বটগাছটা থাকার কারনে ভ্যান চালক ভাইয়েরা ও গ্রামের লোকেরা এর নাম দিয়েছে বটতলী। বটতলী নামেই এই জায়গাটা বর্তমান পরিচিত। এই বটগাছের ইতিহাস বলা বাহুল্য।
আমার জন্ম এই গ্রামেই। আমি এক দরিদ্র ঘরের সন্তান। তবে আল্লাহ তাআলার রহমতে আমাদের পরিবারে ছিলো অসিম সুখ। আমি তখন পড়ি ক্লাস ফাইবে। আমার মনটা ছিলো উড়াল পাখির মত। স্কুল বন্ধ পেলেই যে সারাটা দিন ঘুড়ি পাখীর খোজে। মনে বড় আসা ছিলো একটা পাখি পালবো। কিন্তু তা হয়না। পাখির ছানা আনার পর দুই একদিন থাকার পরেই যেন মারা যায় । মা জননী একদিন আমাকে বকা দেন। বলেন পাখি আনলে তার পড়া শুনা হয়না আর গুনা হয়। মা জননীর মুখে এমন কথা শুনে আমি তওবা করি মনে মনে আর কোন দিন পাখির ছানা আনবো না। বা পাখির ডিম ভাঙ্গবো না। এবং কেউ যদি পাখির ছানা আনে বা ডিম ভেঙ্গে ফেলায় তাকেও মা জননীর এই কথা গুলো বলবো। । কারন আমার মনে অনেক আশা আমি পড়া শুনা করে অনেক বড় হবো। বাবা মার আশা পুরন করবো। দুঃখের বিষয় আমাকে পড়াশুনা করতে হয় একটা দোকানে কাজ করে। নইলে আমার জীবনের ছাত্র জীবন সেইখানে হতো ইতি। আমি কাজ করি জুমার বাড়ী আলম ডেকোরেটরে। বেশ সুখেই আছি তবুও আমি । সেখান থেকে ১৫০০ টাকা পাই তা দিয়ে আমার পড়াশুনার খরচ বাদে আমি আরো কিছু টাকা আমার পরিবারের প্রধান আমার বাবাকে দিতে পারি। অনেক সময় আমি নিজেকে এই কারনে ধন্য মনে করি। আবার যখন আমাদের বেশি অভাব হয় তখন আমি মাটি কাটা কাজ, কুলি কাজ করি। এই ভাবে কষ্টের পর কষ্ট করে পড়া শুনা করতে হয় আমায়। পড়াশুনার পাশা পাশি আমি গল্প কবিতা লেখি। আমি ২০১৪ ইং সালে মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড দ্বিতীয় পুরস্কার পাই।
একদিন আমি রাত এগারোটার সময় বাজার থেকে আসছি প্রতি দিনের মত। আমি একা তখন চারপাশে যেন কেউ নেই। বটতলী এসেছি এমন সময় হঠাৎ করে বটগাছের বড় একটা শিখরের নিচে বসে ম্যাও ম্যাও করছে। আমি চমকে উঠলাম কেননা এখানে জ্বিন, পরী, ভূতের, অভাব নেই । কারন প্রতিদিন রাতে বাজার থেকে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভাঙ্গে আবার সকালে এসে দেখি সব ঠিক আছে। আমার হাতে ছিলো ছোট্ট একটা র্টছ নাইট। তা মারলাম বটগাছের গোড়ায়। এমন সময় দেখলাম তাতে একটা বিড়াল । কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে হয় ভিজে গেছে। শীতে কাপছে। আমি দেখে চলে যাচ্ছি এমন সময় মনে হলো বিড়ালের ছানা তো মারা যাবে এখানে থাকলে । অর্ধেক রাস্তা থেকে আবার ফিরে আসি। এসে বিড়ালটাকে হাতে তুলে নিয়ে যাই বাড়িতে। বাবা ঢাকা গেছেন কাজ করতে। মা আমার সহস সরল একটা নরম মনের মানুষ। মা আমার অপেক্ষায় দরজায় দাড়িয়ে আছেন। এমন সময় মাকে আমি সালাম দিলাম প্রতিদিনের মতো ঘরে ঢুকার আগে। মা সালামের উত্তর দিলেন এমন সময় বিড়াল ছানা ম্যাও করে উঠলো। মা যেন চমকেই উঠলেন। আমি হাসছি এমন সময় মা বললো বিড়াল এতো রাতে মানে। কৈ দেখতো বাবা রাতে নইলে ভাত তরকারী খেয়ে ফেলবে। আমি বললাম মা এই যে এখানে বিড়াল । মা বললো বিড়াল কোথাই পেলি বা তোর হাতে কেন বিড়াল। আমি মাকে সব বললাম । মা জননী বললো ভালো কাজ করেছিস বিড়ালের প্রানটা বাচিয়ে। তবে একে রাখবি কোথায় আমি বললাম কেন আমার রুমে। মা তুমি মানা করিওনা। এতো রাতে নইলে এই বিড়াল ছানাটা কোথায় যাবে। মা বললো ঠিক আছে তবে খিয়াল রাখিস বিছানার উপড় যেন না উঠে। আমি বললাম ঠিক আছে মা। এই বলে চলে গেলাম আমার রুমে। সাবান দিয়ে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে এলাম। এসে ভাত খেলাম । এবং বিড়াল টাকেও খেতে দিলাম। তখন আমার মনে হলো বিড়ালটা দুই দিন ধরে হয় তো কিছুই খাইনী। আমি বিড়ালটাকে আমার একটা পুরাতন কাপড় দিয়ে ঢাকিয়ে রাখলাম। তারপর পড়তে বসলাম। রাত একটা পযন্ত পড়লাম প্রতিদিনের মতো। বাতি নিভানোর পর সুয়ে পরলাম কিন্তু বাতি নিভানোর কারনে বিড়ালটা ম্যাও ম্যাও ম্যাও করতে লাগলো। আমার তো ঘুম আসছেনা। পাশের ঘর থেকে মাও বলছে বিড়ালটা নইলে বাহিড়ে রেখে আয়। ওর মা এসে ওকে নিয়ে যাবে। আমি তা আর করলাম বিড়ালটা এনে আমার কাছে রাখলাম আমার বিছানার এক সাইটে। আর ম্যাও ম্যাও করে না। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিড়াল ছানা নেই আমার বিছানায়। এখানে ওখানে খুজি কোথাও পাইনা। মাকে বললাম দেখেছো ? মা বলে আমিও দেখিনী। আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি, এমন সময় বিড়াল ছানাটা এলো আমাদের বাড়ির পেছনে জঙ্গলের মধ্যে থেকে। তাতে বুঝা গেলো বিড়াল ছানা পায়খানা পিসাব করে এলো ঐ জঙ্গল থেকে। আমি বিড়ালকে বললাম বন্ধু কোথাই গেছিলে আমি খুজলাম তোমায়। বিড়ালছানা শুধু আমার চার পাশে ঘুড়ছে আর ম্যাও ম্যাও করছে। আমি কিছু বুঝলাম না আসলে কেন ম্যাও ম্যাও করছে আমার চারপাশে। মা জননী ভাত এনে দিলেন আমি খাচ্ছি বিড়াল ছানাকেও দিলাম । ঘাপুস ঘাপুস করে খেলো বিড়াল। আমি তখন বুঝে নিলাম বিড়াল ছানা চারপাশে ঘুরলে বুঝে নিতে হবে এ খেতে চাচ্ছে। আমি দেরি না করে স্কুলে গেলাম। ক্লাস করলাম সব কয়টাই প্রতিদিনের মত। ঠিক চারটা বিশে এলাম বাড়িতে । এসেই মা জননীকে সালাম দিলাম। বিড়াল ছানা তখন আমার রুমে। আমার কন্ঠ শুনে দৌড়ে এলো এসেই আমার চারপাশে ঘুড়ছে। আমি মাকে বললাম মা বিড়ালটা কে খেতে দিয়েছিলে । মা বললো বিড়াল তো ছিলোই না। আমি মাকে বললাম আমাকে ভাত দাও ক্ষুধা লেগেছে। মা ভাত এনেদিলেন আমি খাইলাম। আর বিড়ালটাকে ও খেতে দিলাম। ও খেয়ে যেন আমার পিছ ছাড়ছেনা। আমি কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম । পাঁচটা বেজে গেছে আবার যেতে হবে বাজারে অথাৎ চাকুরীতে। তবুও আমার পিছ ছাড়ছেনা। আমি বিড়াল ছানাকে ঘরের মধ্যে রেখে পালিয়ে যাই বাজারে। সেদিন আমি আর আমার ওস্তাদ শফি চাচা গেছি বাজারের পশ্চিম পাড়ায় একটা বিয়ের গেট সাজাতে। তখন বাজে প্রায় রাত সাড়ে বারোটা। ওস্তাদ আমাকে আমাদের বাড়ীর রাস্তায় রেখে আসলেন। আমার প্রান প্রিয় মা জননী আমার আসতে দেরি হচ্ছে তাই বাতি জ্বালিয়ে রাস্তায় এসে দাড়িয়ে আছেন। আমি দুর থেকে দেখতে পারছি আমার মা জননী আমার অপেক্ষায় দ্বাড়িয়ে আছেন। মার কাছে এসেই সালাম দিলাম মা সালামের উত্তর দিয়ে বললেন। বাবা এতো দেরি হলো কেন? আমি বললাম মা এক জায়গায় কাজে গেছিলাম। তাই দেরি হলো আমার কন্ঠ শুনে যেন বিড়াল ছানা বাতাসের মত ম্যাও ম্যাও করে উড়ে এলো আমার কাছে। আমি অবাক হলাম বিড়াল আমাকে এতো ভালোবাসে। মা বললো তুই ছিলিনা তোর বিছানায় বসে ছিলো এতোক্ষন আমি বাহিড়ে এলাম আর আমার পিছে পিছে এলো বিড়ালটা। আমি বিড়ালটাকে ধরে হাতে নিলাম তুলে এবং আদর করলাম। ঘরে গিয়ে ওকে খেতে দিলাম । মা বললো আমিও খেতে দিয়েছিলাম কিন্তু খেলো না। এখন খাচ্ছে। আজও নিলাম আমার বিছানায়। আমার সাথে ঘুমায় প্রতিদিন এই বিড়াল ছানা।
এই ভাবে কেটে যায় বেশ কয়দিন । বিড়ালটা যেন আমাকে খুব ভালোবাসে আমি ছাড়া অন্য কারো খাবার খায়না সে। আমি স্কুল থেকে এবং বাজার থেকে বাড়িতে আসার সময় বিড়ালের জন্য বিস্কুট নিয়ে আসি প্রতিদিন সেগুলেও খায় সে। বাবা এলেন ঢাকা থেকে। বাবা এই সব পছন্দ করেন না তবুও ওর আর আমার বন্ধুত্ব দেখে মেনে নেয়। তিনিও ভালোবাসেন বিড়াল ছানাকে। আমার পরিবারের সবার আদর পায় বিড়াল ছানা। এখন বিড়াল ছানা আমার পরিবারের সবার হাতের খাবার খায়। হঠাৎ একদিন নানার বাড়ী থেকে ফোন আসে। আমাকে আর আমার মা জননীকে যেতেই হবে। যেতে চাইলাম না তবুও যাওয়া লাগলো। বাবা বাড়িতে একা থাকবেন। আমি বাবাকে বললাম বিড়ালটাকে ঠিক মত খেতে দিয়েন। নইলে বিড়াল ছানা মারা যাবে। বাবা বললো ঠিক আছে । আমি আগামীকাল আসবো এই কথা বলেই মা আমাকে নিয়ে যায়। কিন্তু আগামীকাল ও আসা হয়না আমার। দুইদিনের মাথায় বাবাও চলে আসেন নানার বাড়ী। বাড়িতে আছেন আমার চাচী আমি চাচীর মোবাইলে ফোন দিয়ে বলি বিড়াল ছানাকে খেতে দিয়েন। চাচী বললেন ঠিক আছে বাবা তবে বিড়ালকে তো দেখাই পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি চিন্তায় পড়ে যাই মনে করলাম হয়তো কোন খানে গিয়ে বিড়াল ছানা আছে। আর খোজ নেইনী আমি । আমরা নানার বাড়ী থেকে এলাম সাতদিন পর এসে প্রথমেই বন্ধু বন্ধু বলে ডাকি । কোন যব নেই। আগে আমার কন্ঠ শুনলেই দৌড়ে আসতো ম্যাও ম্যাও বলে আজ আসছেনা। আমি বিড়ালের জন্য বিস্কুট এনেছি। এঘরে ওঘরে খুজছি কিন্তু কোথাও নাই। মা ঘর ঝাড়– দিতেই দেখেন বিড়াল ছানা খাটের নিচে এক কোণায় মরে আছে। আমাকে মা ডাকলেন আমি বিড়াল ছানাকে দেখে কেদেই উঠলাম। কিছুক্ষন কাদলাম। মা বললো বিড়ালটা ভিটায় র্গদ খুড়ে মাটিতে পুতে রাখ নইলে গন্ধ বেড় হবে। আমি তাই করলাম। তবে খুব কষ্ট পেলাম। বিড়াল ছানা ছাড়া অনেক রাত র্নিঘুম কেটে দিয়েছি। বিড়াল ছানার কথা মনে পড়লে বা মনে হলে খুব খুব কষ্ট পাই। বিড়াল ছানাকে আমি খুব মিছ করি।